আঞ্চলিক উন্নয়নে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরি: প্রধানমন্ত্রী
- জাতীয় - সরকার
- ১২ নভেম্বর ২০১৯ - ৫ বছর আগে
- পড়া হয়েছে - ২২৩৭১
ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা গ্লোবাল ডায়ালগ-২০১৯’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। উন্নয়নের জন্য শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখাটা জরুরী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে "বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিস) এবং ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) যৌথভাবে তিনদিন ব্যাপী এই ডায়ালগের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিক শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিষয়টি অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহব্বান জানাচ্ছি ।" তিনি বলেন, "সামুদ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মনে করে, পরস্পরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা বা ‘জিরো-সাম গেম’ বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরের ‘নীল অর্থনীতি’ বিকাশের জন্য সহায়ক নয়। বরং তা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশগুলোর অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অত্যাবশ্যক।"
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও এর মাধ্যমে ‘নীল অর্থনীতির’ টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সহায়তাপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ,ও সমতাপূর্ণ সম্পর্ক আবশ্যক।" এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ সর্বদা বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকায় শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে সচেষ্ট। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছে। "
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "প্রতি বছর বিশ্বের সাগর-মহাসাগরগুলোতে যোগ হচ্ছে ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য। দূষণ ও সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ সামুদ্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা।"
বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকায় জলদস্যুতা, অস্ত্র ও মাদক পাচার- এর মত অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসনে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, "কোন একক দেশের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ ও নানাবিধ দূষণ, সামুদ্রিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। শুধু বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর নয়, বিশ্বের সকল সাগর-মহাসাগরই বহুবিধ সমস্যায় আক্রান্ত। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার জন্য আমি সকল রাষ্ট্রের প্রতি আহব্বান জানাই।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ মনে করে, এই সহযোগিতা হতে হবে সকলের অংশগ্রহণমূলক এবং সবার উন্নয়ন ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে।" তিনি বলেন, তেমনিভাবে "ঢাকা গ্লোবাল ডায়ালগ-২০১৯" পরিবেশবান্ধব শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের পথে কাজ করছে।"
তিনি বলেন,‘দারিদ্র্য আমাদের প্রধান শত্রু। কাজেই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের দারিদ্র্য দূর করে তাদের সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন নিশ্চিত করা।" বাংলাদেশকে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান... বলেন, "এরফলে সৃষ্ট বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, নদী ভাঙ্গনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বসবাস করতে হয়।" এ প্রসঙ্গে তিনি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জনেরও উদাহরণ দেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, "প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।যেহেতু বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ। তাই এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের পানি সম্পদের সুষ্ঠু ও যথাযথ ব্যবহার করার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই স্থান দিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ অতিক্রম করেছে, যা এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতিসমূহের জ্বালানি ও রসদের যোগান দেয়।বিশ্বের কনটেইনার শিপমেন্টের অর্ধেক এবং সমুদ্রবাহিত তেল বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগ অতিক্রান্ত হয় ভারত মহাসাগর দিয়ে। বিশ্বের প্রমাণিত তেল মজুদের শতকরা ১৬ দশমিকব ৮ ভাগ ও প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের শতকরা ২৭ দমমিক ৯ ভাগ এই মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন সাগরসমূহে অবস্থিত।"
"এই অঞ্চলে সারা বিশ্বের শতকরা ২৮ ভাগ মৎস্য আহরিত হয়," উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই বিপুল সম্পদের উৎস এবং কৌশলগত কারণে ভারত মহাসাগর বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।" বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের শতকরা ৯০ ভাগই সমুদ্রপথে হয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই সমুদ্র বাণিজ্যপথের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশ তার সমগ্র ভূ-খন্ডে যে পরিমাণ সম্পদ উৎপাদন করে, তার প্রায় সমপরিমাণ সম্পদ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্য থেকে আহরণ করা সম্ভব।"
তিনি বলেন, "আরও কয়েকটি দেশ যেমন: নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যদিও বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত নয়, তবুও তাদের অর্থনীতিতে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।" প্রধানমন্ত্রী বলেন, "মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সমুদ্রসীমার বিশাল এলাকা বাংলাদেশের জন্য বিপুল সম্পদের উৎস।দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই সম্পদের সদ্ব্যবহার অনেকাংশে নির্ভর করে।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "গ্যাস ছাড়াও ভারত মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ মৎস্য, খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ আছে। সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত পরিকল্পনা এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সম্পদ এই এলাকার দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করা সম্ভব।" তিনি বিগত সাড়ে ১০ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বলেন, "আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে অভিহিত হচ্ছে এবং আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর অন্যতম।"
তিনি বলেন, "বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ বর্তমানে এশিয়ায় দ্বিতীয় ও বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে। আইএমএফ-এর হিসেব অনুযায়ী পিপিপি’র ভিত্তিতে বাংলাদেশের উৎপাদন সারা বিশ্বে ৩০তম।"
অনুষ্ঠানে ‘আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ভিডিও উপস্থাপনা ও পরিবেশিত হয়। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. সামির স্মরন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং বিস এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মন্তব্য